ভাসমান সেতুটির অবস্থান :
বাংলাদেশের সর্বপ্রথম এবং সর্ববৃহৎ ভাসমান সেতু ঝাঁপা ভাসমান সেতু।এটি ঝাঁপা বাওড়ের দুই তীরের মানুষদের যাতায়াতের সুবিধার্তে স্থাপন করা হয়েছে।বর্তমানে এটি বাংলাদেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।![]() |
চিত্র:ঝাঁপা ভাসমান সেতু |
এ সেতুটি যশোর জেলার মনিরামপুর থানার রাজগঞ্জ সংলগ্ন ঝাঁপা গ্রামের অন্তর্গত।
ঝাঁপা গ্রামটির আয়তন প্রায় ৩ বর্গ কি: মি:। এবং এর চারিদিকে প্রায় ৬ কি: মি: এলাকা জুড়ে বয়ে গেছে ঝাঁপা বাঁওড়টি।বাঁওড়টি যেনো ঝাঁপা গ্রামের অনন্ত প্রহরী।
ঝাঁপা ভাসমান সেতু নির্মাণের প্রেক্ষাপট:
মনিরামপুর থানার ঝাঁপা গ্রামটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ একটি গ্রাম।গ্রামটি ৩ টি ওয়ার্ড এর সমন্বয়ে গঠিত।গ্রামটিতে প্রায় ২০ হাজার বাসিন্দা বসবাস করে।দুঃখজনক হলেও সত্য যে গ্রামটিতে কোনো উন্নত বাজার ব্যাবস্তা ও চিকিৎসা ব্যাবস্থা নেই।স্বাভাবিক ভাবেই তাদের নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটাতে বাঁওড়ে অপর তীরে রাজগঞ্জ বাজারে যাতায়াত করতে হয়।সেতুটি নির্মানের পূর্বে ঝাঁপা থেকে রাজগঞ্জ বাজারে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিলো নৌকা। যেটা প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় বন্ধ থাকতো।ঝাঁপা গ্রামের কোনো অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো।সঠিক সময়ে হাসপাতালে না নিয়ে যাওয়ার কারনে অনেকে মারাও গিয়েছে। নৌকা পারাপার হতে যেয়ে অনেকে নৌকা থেকে বাঁওড়ে পড়ে যেয়ে আহত হয়েছে।ঝাঁপা গ্রামের সাধারন মানুষের যখন স্বাভাবিক জীবন যাপন যখন ব্যাহত হচ্ছে। ঠিক তখনই ঝাঁপা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ৫৬ জন তরুনের উদ্দ্যোগে এবং অর্থায়নে ঝাঁপা ভাসমান সেতুটি নির্মানের কার্যক্রম শুরু করা হয়।ভাসমান সেতুটির বৈশিষ্ট্য :
ভাসমান সেতুটি মূলত প্লাস্টিকের ব্যারেলের ওপরে লোহার পাত বসিয়ে নির্মান করা হয়েছে।বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম এই ভাসমান সেতুতে ব্যাবহার করা হয়েছে ৮৮৯ টি বড় আকারের প্লাস্টিক ব্যারেল এবং ১৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যের লোহার পাত।ভাসমান এই সেতুটি প্রস্তে ৯ মিটার।প্রায় সাড়ে ৩ মাস পরিশ্রমের পর সেতুটির সম্পূর্ণ নির্মান কাজ সম্পন্ন হয়।সেতুটিতে মানুষ সহ সাইকেল,মোটরসাইকেল,ইজিবাইক সহ ছোটো খাটো সকল ধরনের পরিবহণ খুব সহজে যাতায়াত করতে পারবে।ঝাঁপা ভাসমান সেতু ভ্রমন:
ঝাঁপা ভাসমান সেতু বাংলাদেশের একমাত্র ভাসমান সেতু হওয়ার কারনে।উন্মুক্ত করার পর থেকে ঝাঁপা সেতুতে অগনিত দর্শনার্থীর সমাগম হতে থাকে।তাদের তোলা ছবিতে ফেসবুকের ওয়াল যখন পরিপূর্ন। তাদের স্টাটাসে অতিষ্ট হয়ে আমরা ৪ ভাই এবং একটা ভাগনে মিলে সিদ্ধান্ত নেই ঝাঁপা ভাসমান সেতু ভ্রমনের।একদিন দুপুরের একটু পরে আমরা ৫ জন মিলে ঝাঁপা ভাসমান সেতুর উদ্দেশ্যে রওনা হয়।আমাদের বাসা থেকে ১২ কি.মি. দুরে হওয়াতে ২ টা মোটরসাইকেল করে রওনা দেয়।রাস্তা ভুল করার কারনে নির্দিষ্ট সময়ের ৩০ মিনিট পরে আমরা ঝাঁপা ভাসমান সেতুর নিকট পৌছায়। নিকটবর্তী হওয়াতে আমরা ঝাঁপা গ্রামের ভেতর দিয়ে সেতুটির নিকট যায়।গ্রামটির ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় বুঝতে পারছিলাম গ্রামটি অনেক বড়।কিন্তু গ্রামটিতে এখনও তেমন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।যাহোক ওখানে পৌছানোর পরে সেতুটি সুন্দর ভাবে দেখার জন্য মোটরসাইকেল বাঁওড়ের এ পাড়ে রেখে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।একটু দেরিতে পৌছানোর কারনে আমরা দ্রুত সেতুটির নিকটে চলে আসলাম।এসে বুঝতে পারলাম এখানে অনেক মানুষের সমাগম ঘটেছে।এত বেশি পরিমাণ মানুষ সেতুটির উপর দিয়ে যাতায়াত করছিলো যে প্রাথমিক ভাবে একটু ভয়ই পাচ্ছিলাম সেতুটির উপর উঠতে।আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম সেতুটি দিয়ে হেঁটে ওপাড়ে যেয়ে রাজগঞ্জ বাজারে যেয়ে আমরা কিছু খাওয়া দাওয়া করবো।সেতুটির উপর দিয়ে হাটতে খুবই ভালো লাগছিলো।মানুষের হাটাহাটির চাপে এবং বাতাসের কারণে ব্রিজটি হালকা হালকা দুলছিলো।আপনার কাছে এমনটি মনে হতে পারে কেউ বুঝি বাঁওড়টির উপরে দোলনা ভাসিয়ে দিয়েছে।সবারই মতো আমরাও ফেসবুকে দেবার উদ্দ্যেশে কিছু ছবি তুললাম।
![]() |
চিত্র: সেতুটির ওপরে তোলা ছবি |
বাঁওড়টির আয়তন এতো বড় যে মনে হচ্ছিলো আমরা বোধহয় ছোটোখাটো কোনো একটা সুমুদ্রে এসেছি।বাঁওড়ের পানি এতটাই স্বচ্ছ ছিলো যে বাঁওড়ের তলদেশ পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো।
হঠাৎ বাঁওড়ের এক পাশে দেখলাম কিছু নৌকা বাঁধা আছে।কিছু নৌকা ২-৩ জন যাত্রী নিয়ে বাঁওড়ের এ তীর থেকে ও তীরে যাতায়াত করছে।
![]() |
চিত্র: সেতুটির পাশের চিত্র |
জানতে পারলাম আগে যে নৌকা ঝাঁপার মানুষের যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করা হতো তা এখন দর্শনার্থীদের আনন্দ দানে ব্যবহার করা হচ্ছে।আপনিও চাইলে সখের বশে ঘুরতে পারেন নৌকাতে।
আমরা হাটতে হাটতে সেতুটির অপরপ্রান্তে রাজগঞ্জ বাজারে পৌছে গেলাম।বাজারটি মোটামুটি বড়।আমরা বাজারটিতে ঘোরাঘুরি করে কিছু খাওয়া দাওয়া করে আবার সেতুটির দিকে রওনা দিলাম।
সেতুটির মাঝখানে যেয়ে দেখি আমার অনেক পরিচিত বন্ধুরাও আমাদের মতো ঘুরতে এসেছে।
লক্ষ করে দেখলাম সূয্যি মামা অস্তমিত প্রায়।এমন পরিবেশ দেখে আমার কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের কথা মনে পড়ে গেলো।
![]() |
চিত্র: সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় সেতুর উপর |
সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার কারনে আমরা যত দ্রুত সম্ভব সেতু পার হয়ে আমাদের মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত ফেরার উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলাম।
Post a Comment